
Carbide Gun Trauma Malda: মজা করতে গিয়ে চোখ গেল ৮ শিশুর। দীপাবলীর আলো ম্লান হয়ে গেল মুহূর্তে। মধ্যপ্রদেশের ভোপালের পর এবার বাংলার মালদা জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ল ‘কার্বাইড গান’-এর আতঙ্ক। উৎসবের মেজাজে গা ভাসিয়ে অনেকে ইউটিউব দেখে বানাচ্ছেন এই ভয়ংকর বিস্ফোরক খেলনা। ফল, একের পর এক দুর্ঘটনা, আর দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কায় বহু শিশু ও তরুণ।
গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কার্বাইড গান বিস্ফোরণের ঘটনায় দৃষ্টি নষ্ট হওয়ার খবর মিলেছে। এবার মালদা জেলার অন্তত আটজন তরুণ ও কিশোর এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে চিকিৎসক মহল।
জানা গিয়েছে, মাণিকচকের মহানন্দটোলার এক শিশুকে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসার জন্য নেপালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুক্রবার মালদা শহরের চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেবদাস মুখোপাধ্যায়ের কাছে চোখ দেখাতে আসে ১৩ বছরের আকাশ বিশ্বাস, গাজোলের বাসিন্দা। প্রশ্নে জানা যায়, ইউটিউবে দেখা ভিডিও দেখে ঘরে থাকা প্লাস্টিক বোতল, কার্বাইড আর জল দিয়ে সে তৈরি করেছিল এক বন্দুকসদৃশ বস্তু। গ্যাস লাইটার দিয়ে আগুন ধরানোর পর মুহূর্তেই বিস্ফোরণ ঘটে, আর তার ফলেই চোখে গুরুতর আঘাত পায় সে।
একই চিত্র হবিবপুরেও। সেখানকার ২০ বছরের কিশোর বিশ্বাস জানান, তাঁদের গ্রামে এক বন্ধু কার্বাইড গান বানাচ্ছিল। হঠাৎ তাতে আগুন ধরে যায়। আগুন নেভাতে গিয়ে কিশোরের হাতে লাগে কার্বাইড, পরে সেই হাত চোখে দেওয়ায় জ্বালা ও ঝাপসা দেখা শুরু হয়।
চক্ষু চিকিৎসকদ্র মতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও জলের বিক্রিয়ায় তৈরি হয় অ্যাসিটিলিন গ্যাস, যা অত্যন্ত দাহ্য। এই গ্যাসের বিস্ফোরণেই চোখে গুরুতর ক্ষতি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারানোর ঝুঁকি থাকে।” চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এই ‘কার্বাইড গান’-এর ট্রেন্ড যদি এখনই থামানো না যায়, তাহলে আরও অনেক ঘরে অন্ধকার নামিয়ে আনবে। তাই প্রশাসনের কাছে তাঁদের আবেদন। ইউটিউবে এই ধরনের ভিডিও অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হোক, এবং স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা প্রচার চালানো হোক।
কী এই কার্বাইড গান?
মূলত ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2) অর্থাৎ, ফল পাকাতে যে রাসানিক ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে ছোট আকারের বিস্ফোরণ ঘটায় এই গান। এটি তৈরি করা হয় সাধারণত প্লাস্টিক বা টিনের পাইপ দিয়ে। এই পাইপের ভিতরেই ঘটে রাসায়নিক বিক্রিয়া। পাইপের ভিতরে সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম কার্বাইড রাখা হয়। এর সঙ্গে সামান্য জল যোগ করলেই তীব্র রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয়। এর ফলে তৈরি হয় অ্যাসিটিলিন গ্যাস (C2H2) । এই গ্যাস অত্যন্ত দাহ্য। পাইপের মধ্যে অ্যাসিটিলিন গ্যাস জমা হওয়ার পরে, একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে লাইটারের মাধ্যমে সেই গ্যাসে আগুনের ফুলকি দেওয়া হয়। অ্যাসিটিলিন গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে এলেই তীব্র বিস্ফোরণ ঘটায়।