
Elephant Attack Dooars: উত্তরবঙ্গ জুড়ে ফের বুনো হাতির তাণ্ডব। মাদারিহাটে মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে এক দেড় বছরের শিশুকন্যা-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে হাতির হানায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংখ্যাটা পৌঁছয় ৪-এ।বুধবার সন্ধে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাধুধুরার খড়িয়াপাড়া ও মধ্য ছেকামারিতে ঘটে যায় ভয়াবহ এই দুটি ঘটনা। অন্য ঘটনাটি ঘটেছে ডুয়ার্সেরই নাগরাকাটায়।
প্রথম ঘটনা বুধবার সন্ধে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন মধ্য ছেকামারির বাসিন্দা আব্দুল কাদির। বাড়ির সামনেই আচমকা এক বুনো হাতি এসে তাঁকে পিষে মেরে ফেলে। এরপর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ, খড়িয়াপাড়ায় ফের সেই একই হাতির হামলা। কালীপুজোর অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন সোনাই মুন্ডা (৩৪) ও তাঁর স্বামী সীতারাম মুন্ডা। কোলে ছিল দেড় বছরের মেয়ে লক্ষ্মী। হঠাৎই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে হাতিটি। চোখের নিমেষে মা-মেয়েকে পিষে মারে। স্ত্রীর ও শিশুকন্যার মৃত্যু চোখের সামনে দেখেও কিছুই করতে পারেননি সীতারাম।
তিনি বলেন, “কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সব শেষ। আমি মাত্র দু’ কদম পিছনে ছিলাম। চোখের সামনে স্ত্রী ও মেয়েকে পিষে দিয়ে গেল হাতিটা। সেই চিৎকার আজও কানে বাজছে।”
পর পর তিন মৃত্যুর তদন্তে নেমে জলদাপাড়া বনবিভাগ নিশ্চিত করেছে, একটিমাত্র হাতিই এই হামলাগুলির জন্য দায়ী। হাতিটিকে চিহ্নিত করে জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। ডিএফও পরভিন কাসোয়ান জানান, “হাতিটিকে খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে।”
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। শুক্রবার সকালে নাগরাকাটা ব্লকের নিউখুনিয়া বস্তিতে ফের হাতির হামলায় মৃত্যু হয় শম্ভু মঙ্গর (৫০)-এর। সকালে গরু খুঁজতে বেরিয়ে হঠাৎই ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে এক হাতি। মুহূর্তে শুড় দিয়ে শম্ভুকে তুলে আছাড় মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। পরে পুলিশ ও বনকর্মীরা গিয়ে দেহ উদ্ধার করে। বন দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
শনিবার সকালেও ময়নাগুড়িতে আতঙ্ক। এক নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে একটি হাতি। আতঙ্কে লোকজন দিকবিদিক ছুটতে থাকে। খবর পেয়ে রামসাই রেঞ্জ ও মোবাইল স্কোয়াডের কর্মীরা পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। এনজেপি-আলিপুরদুয়ার রেলপথের উপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে হাতিটি। রেলের গতিও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এরপর ব্যাংককান্দির দিকে চলে যায় গজরাজ। হাতির হানায় ভেঙে যায় একটি বিদ্যুতের খুঁটি। শরীরেও চোট লাগে হাতিটির।
ব্যাংককান্দি থেকে কলখাওয়া নদী পেরিয়ে উত্তর খাগড়াবাড়িতে ঢোকে সে। খবর সংগ্রহে গিয়ে হাতির হামলায় জখম হন উত্তরবঙ্গ সংবাদের সাংবাদিক বাণীব্রত চক্রবর্তী। তাঁকে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বন দপ্তরের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন হাতিটিকে ফের জঙ্গলে পাঠানোর।
ক্রমাগত গ্রাম থেকে গ্রামে হাতির হামলায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ি-মাদারিহাট জুড়ে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে পারে।