চোখ বন্ধ করুন। মনে মনে নব্বইয়ের দশকের কলকাতার রাস্তাঘাট কল্পনা করুন। নিশ্চই অ্যাম্বাসাডর, চেতকের মতো আইকনিক কিছু যানবাহনই মাথায় আসছে? আসলে যানবাহন জিনিসটাই এমন। আজ আপনি যে গাড়িটা রাস্তায় রোজ দেখছেন, সেভাবে আমল দিচ্ছেন না, বছর ৩০ বাদে সেটা দেখলেই আপনার মাথায় হাজারো স্মৃতি এসে ঘিরে ধরবে।
আসলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরও উর্ধ্বে, প্রতিটি গাড়ি শিল্পীর কল্পনার নিদর্শন। প্রতিটি গাড়ির বনেট, উইন্ডস্ক্রিন, হেডলাইট যুগের সাক্ষ্য বহন করে।
আজকালকার গাড়ি মানেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, স্টাইলিশ ডিজাইন আর ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড। অনেকটা 'চৌকো' গোছের, শার্প ডিজাইন। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন গাড়ির ডিজাইন অনেকটা অন্যরকম ছিল। বেশ আইকনিক ডিজাইন, সুন্দর কার্ভ দেখতে পাবেন। সেই সময় যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁদের কাছে এই গাড়িগুলির স্মৃতি আজও অমলিন। চলুন ফিরে দেখা যাক সেযুগের কিছু ক্লাসিক গাড়িকে।
১. হিন্দুস্তান মোটর্স অ্যামবাসাডর (Ambassador)
এক সময় মন্ত্রী-আমলার গাড়ি মানেই ছিল সাদা অ্যামবাসাডর। তাতে আবার কাঁচে পর্দাও দেওয়া থাকত। ভারতে কমার্শিয়াল লেভেলে বানানো প্রথম কয়েকটি গাড়ির মডেলের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তর—সব জায়গাতেই এই গাড়ির উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ‘লাল বাতি’ লাগানো অ্যামবাসাডর ছিল স্টেটাসের পরিচয়। মজবুত গঠন, আরামদায়ক আসন আর সাদামাটা ডিজাইনই ছিল এর বিশেষত্ব।
২. প্রিমিয়ার পদ্মিনী (Premier Padmini)
মুম্বইয়ের বিখ্যাত 'কালি-পিলি' ট্যাক্সির মডেলগুলি আসলে প্রিমিয়ার পদ্মিনী-ই ছিল। ফিয়াটের নকশা থেকেই ইনস্পায়ার্ড হয়ে এই গাড়ি তৈরি করা হয়। উচ্চ-মধ্যবিত্ত ভারতীয়দের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। কম জ্বালানি খরচ আর কম মেইন্টেন্যান্সের কারণে, এই গাড়ি অল্প সময়েই ভারতের রাস্তায় জায়গা করে নেয়।
৩. মারুতি ৮০০ (Maruti 800)
ভারতের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে বিপ্লব ঘটায় এই ছোট্ট গাড়ি। ছোট, হালকা আর দামে সস্তা। মারুতি ৮০০ অনেক ভারতীয়র প্রথম গাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ করে। ৯০-এর দশকে এর বিক্রি ছিল আকাশছোঁয়া। অনেকে অ্যাম্বাসাডরের বাজার নষ্ট হওয়ার পিছনে এই মারুতি 800-কেই দায়ী করেন। এই বিষয়ে আপনার কী মতামত?
৪. বাজাজ চেতক স্কুটার (Bajaj Chetak)
'হামারা বাজাজ' ট্যাগলাইন দিয়ে তখনকার খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন ছাপা হত। মধ্যবিত্ত পরিবারের ভরসার বাহন ছিল এই চেতক। তেলের খরচ কম, মেরামত সহজ আর টেকসই কাঠামো ছিল এর ইউএসপি। চেতকের ইঞ্জিন পজিশন ঠিক ব্যালেন্সড ছিল না। ফলে সব সময় একদিকে কিছুটা হেলে থাকত। সেটা অ্যাডজাস্ট করেই চালাতে হত।
৫. রাজদূত (Rajdoot)
ভারতে বাইকিংয়ের কালচার শুরু করার পিছনে রাজদূতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আজও বাইক লাভারদের মনে রাজদূতের স্থানই আলাদা। পঞ্জাবের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতার রাজপথ, সর্বত্র দাপিয়ে বেড়িয়েছিল এই বাইক। আজও অনেক পুরনো রাজদূত কিনে রিস্টোর করেন। এর লুক সত্যিই টাইমলেস বলা যেতে পারে।
নব্বইয়ের দশক বলতে আপনার মনে কোন গাড়িগুলির কথা মনে পড়ে? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।