প্রতীকী ছবি ভারতীয়, বিশেষত বাঙালিদের প্রতিদিনের আহারে ভাত না থাকলে চলে না। যতই বিরিয়ানি, চাউমিন, মোমো খাওয়া হোক না কেন, গরম ভাতে ঘি, আলুসেদ্ধ মেখে কিংবা মাছ-ভাত সব বাঙালির অতি প্রিয়। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজকাল অনেকেই দু'বেলা ভাত খাওয়া বন্ধ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় আবার ভাত নিয়ে একটি ট্রিক আচমকাই ভাইরাল হয়েছে। ব্লাড সুগার রোগী হলে কিংবা কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমাতে চাইলে এই ট্রিক অনেকেই মেনে চলছেন। কী সেটি?
প্রেশার কুকার না ফ্যান গালা ভাত, কোনটি বেশি উপকারী? এতদিন এই বিষয়টি ছিল চর্চার কারণ। তবে নতুন যে পন্থা ভাইরাল হয়েছে, সেই অনুযায়ী, ভাত রান্নার পর যদি ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করেন তবে সেটি নাকি আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে যান।
তবে এটি কেবলমাত্র একটি ভাইরাল ট্রিক নয়। নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞান। রান্না করা ভাত ঠান্ডা করার জন্য যদি ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয় তবে এটির মধ্যে থাকা স্টার্চ রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চে পরিণত হয়। এটি ফাইবারের মতো কাজ করে এবং ধীরে ধীরে হদম হয়। সর্বোপরি সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
ভাত এভাবে খাওয়ার ভাইরাল পন্থাটি নিয়ে এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা: মনোজ আগরওয়াল এবং নিউট্রিশনিস্ট রাশি চাহল বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। যাবতীয় বিভ্রান্তি দূর করতে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তাঁরা।
ঠান্ডা কিংবা ফ্রিজে রাখা ভাত ডায়াবেটিসে সাহায্য করে?
নিউট্রিশনিস্ট রাশি চাহলের মতে, 'কিছু স্টার্চ রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চে বদলে যায় যা ফাইবারের মতো হয়। অর্থাৎ গ্লুকোজ ধীরে ধীরে রক্তে পৌঁছয়।' ডা. মনোজ আগরওয়াল বলেন, 'খাওয়ার পর সুগার স্পাইক কিছুটা কম হয় ফলে ডায়াবেটিস কিংবা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স করতে পারেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা কিংবা ফ্রিজে রাখা ভারত সহায়ক হয়।'
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে?
ডা. মনোজ অগরওয়াল বলেন, 'হ্যাঁ থাকে। তবে অনেকটাই কম মাত্রায়। রিসার্চে দেখা গিয়েছে, ঠান্ডা বা ফ্রিজে রাখা ভাত খাওয়ার পর সুগার স্পাইক ১০ থেকে ২০% কম হতে পারে। বড় কোনও বদল না হলেও এটি উপকারী। এটিকে ছোটখাট বদল ধরে নিতে পারেন, ম্যাজিকের মতো কাজ করে না। তবে অবশ্যই ভাল ভাবে রান্না করতে হবে ভাত। দ্বিতীয়বার গরম করতে হবে ভাল ভাবে যাতে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ বজায় থাকে।'
ঠান্ডা বা ফ্রিজে রাখা ভাত স্বাস্থ্যকর?
রাশি চাহল বলেন, 'এই ভাবে ভাত খেলে কেবলমাত্র ব্লাড সুগার স্বল্প মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালরিতে ভরা থাকেই। হজম ধীরে হয় এবং দীর্ঘসময় পেট ভর্তি থাকে।' ডা. মনোজ আগরওয়াল বলেন, 'এটি একটি স্মার্ট কিচেন হ্যাবিট। তবে কখনও ওষুধ কিংবা এক্সারসাইজের বিকল্প হতে পারে না। বাসমতী এবং লং গ্রেন রাইস বেশি উপযুক্ত এক্ষেত্রে। ব্রাউন রাইসে অতিরিক্ত ফাইবার থাকে।'
পুনরায় গরম করলে কী ক্ষতি?
ডা. মনোজ আগরওয়াল সতর্ক করে বলেন, 'ভাত ভুল পদ্ধতিতে খেলে ফুড পয়েজনিং পর্যন্ত হতে পারে। সর্বদা দু'ঘণ্টার মধ্যে রান্না করা ভাত ফ্রিজে রাখা উচিত এবং ফ্রিজ থেকে বের করে ভাল ভাবে গরম করা উচিত।'
রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চের ফায়দা কী?
> ধীরে ধীরে হজম হয়, ব্লাড সুগার কম মাত্রায় বাড়ে।
> পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে।
> গাট হেলথ ভাল থাকে।
> ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়।