আপনাকে কে ঈর্ষা করে, কীভাবে বুঝবেন প্রিয়জনের গোপন মনোভাব?Jealousy Tips: অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষরাই আমাদের সাফল্যে খুশি হতে পারেন না। তারা মুখে অভিনন্দন জানালেও, মনে মনে একটা অস্বস্তি বা ঈর্ষার ভাব লুকিয়ে রাখেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, যাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ, তাঁদের সঙ্গেই তুলনা বা প্রতিযোগিতার অনুভূতি তৈরি হয় সবচেয়ে সহজে।
ঈর্ষা এমন এক আবেগ, যা আসে নিরাপত্তাহীনতা, তুলনা এবং প্রিয়জনকে হারানোর ভয় থেকে। আর এই তিনটি কারণই সাধারণত সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রে। বন্ধুত্ব, ভাইবোন, দাম্পত্য, যে কোনও সম্পর্কেই এই আবেগ মাথা চাড়া দিতে পারে।
তুলনা থেকেই জন্ম নেয় ঈর্ষা
কাছের মানুষরা প্রায়ই নিজেদের জীবনের সঙ্গে অন্যের জীবনকে তুলনা করে ফেলেন। একজন বন্ধু বা পরিবারের সদস্য যদি ভালো কিছু করেন, তখন অন্যজন নিজের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ‘ও পেরেছে, আমি কেন পারিনি?’—এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ঈর্ষা।
নিরাপত্তাহীনতা এবং মনোযোগের অভাব
যখন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কেউ প্রশংসা বা মনোযোগ পান, তখন অন্যজন মনে করেন, তাঁর গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। এই নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি থেকে শুরু হয় মানসিক অস্থিরতা, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় ঈর্ষায়।
প্রতিযোগিতার রূপ বদলে যায়
ভাইবোন, বন্ধু বা সহকর্মীদের মধ্যে হালকা প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন সেই প্রতিযোগিতা সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং সাফল্যের বদলে সম্পর্কের জায়গা দখল করে নেয়, তখন সেটাই হয়ে ওঠে ঈর্ষার উৎস।
ভয়-প্রেমের সম্পর্কে ঈর্ষার মূল কারণ
রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঈর্ষা প্রায়শই প্রিয়জনকে হারানোর ভয় থেকে আসে। প্রিয় মানুষটি অন্য কারও সঙ্গে বেশি সময় কাটাচ্ছেন বা মনোযোগ দিচ্ছেন—এই ভাবনাই তৈরি করে আতঙ্ক ও ঈর্ষা।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব
বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়াও ঈর্ষা বাড়িয়ে তুলছে। অন্যের সাফল্য, বিলাসিতা বা সুখী জীবন দেখে আমরা অজান্তেই নিজেদের জীবনকে তাতে তুলনা করি। ফলেই মনে জন্ম নেয় হীনমন্যতা এবং অবচেতন ঈর্ষা।
সবসময় খারাপ নয় ঈর্ষা
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঈর্ষা সবসময় নেতিবাচক নয়। যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে এই অনুভূতিই হয়ে উঠতে পারে প্রেরণার উৎস। বন্ধুর সাফল্য দেখে বিরক্ত না হয়ে, সেটিকে নিজের উন্নতির অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঈর্ষা সামলানোর উপায়-প্রথমে যোগাযোগ
যদি মনে হয় সম্পর্কের মধ্যে ঈর্ষা ঢুকে পড়েছে, তবে প্রিয়জনের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন। তাঁদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করুন, তারা কেন এমন আচরণ করছে তা জানুন। অনেক সময় সোজা কথা বললেই ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে যায়।
তুলনা নয়, উদযাপন করুন প্রিয়জনের সাফল্য
অন্যের সাফল্যকে নিজের ব্যর্থতা হিসেবে না দেখে, সেটিকে উদযাপন করুন। প্রিয়জন কিছু অর্জন করলে তার আনন্দে সামিল হন। তাতে সম্পর্ক দৃঢ় হবে, মনও শান্ত থাকবে।
মানসিক ভারসাম্যই সমাধান
যদি ঈর্ষার অনুভূতি অতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে, তাহলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, সম্পর্কের ভিতরে ঈর্ষা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করাও পরিণত মানসিকতার লক্ষণ। সম্পর্ক বাঁচাতে চাইলে নিজের আবেগের দিকেও নজর রাখা জরুরি।