
মঙ্গলবার রাত ১টা বেজে ৫ মিনিট থেকে রাত দেড়টা। মাত্র ২৫ মিনিটে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের পঞ্জাবের ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। আর এই অবহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত বেশকিছু ছবি ও ভিডিও। যেগুলির কোনটিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনা বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান হিসাবে দাবি করা হচ্ছে। আবার কিছু ছবিকে ভারতীয় বিমানঘাটিতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার দৃশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথম দাবি, “পাকিস্তান পাল্টা জবাবে একের পর এক ইন্ডিয়ান এয়ারবেসগুলোতে মিসাইল হামলা করছে।সেটা আবার পাকিস্তানের জাতীয় টেলিভিশন পিটিভি লাইভ সম্প্রচার করছে।এভাবে হামলা-পাল্টা হামলা চলতে থাকলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া পুড়বে। দিল্লি আর ইসলামাবাদে আগুন লাগলে, ঢাকাও রক্ষা পাবে না। আল্লাহ সহায় হোন।”
দ্বিতীয় দাবি, “পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষে'পণা'স্ত্র হা'ম'লা চালিয়েছে ভারত।”
তৃতীয় দাবি, “ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ৩টি জায়গায় ভারত মিসাইল হামলা করেছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, প্রথম এবং দ্বিতীয় ছবি দুটি যথাক্রমে ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল ও ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর গাজায় ইজরায়েলি বিমান হামলার ঘটনা। অন্যদিকে ভাইরাল ভিডিওটিতে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের শুরুতে ইজরায়েলের মাটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য দেখা গেছে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
প্রথম ছবিটিতে একটি রাস্তার উপরে বেশ কিছু গাড়ি-সহ কিছু মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং এলাকাটি কালো ধোঁয়া ভরে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটির সত্যতা জানতে সেটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ করলে ২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল জার্মান সংবাদমাধ্য DW News-এর অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। সেই ভিডিওর ৭ থেকে ৯ সেকেন্ডের ফ্রেমের সঙ্গে আমরা ভাইরাল ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাই। ভিডিওটিতে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, সেটি ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল গাজায় ইজরায়েলি বিমান হামলার ঘটনা।
Palestinians in Gaza attempt to find safety after the Israeli army launched strikes on several hospitals. A senior Hamas official said the Islamist militant group expects to respond within 48 hours to an Israeli ceasefire proposal it received through mediators. pic.twitter.com/ePqtzbuCI3
— DW News (@dwnews) April 16, 2025
দ্বিতীয় ছবিটিতে কোনও একটি স্থানে বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ছবিটি সম্পর্কে জানতে সেটি নিয়ে অনুসন্ধান চালালে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর আফগানিস্তান ভিত্তিক সংবাদমাধ্য কাবুল নিউজের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। সেই ভিডিওর একদম শুরুর ফ্রেমের সঙ্গে ভাইরাল ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেটি ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর ইজরায়েলের তরফে গাজায় হামলা চালানোর দৃশ্য।
اسرائیلو پرون شپه پر غزې باندې خپلو بمباریو ته شدت ورکړی.
— KABUL NEWS (@kabulnewstv) October 23, 2023
د فلسطیني رسنۍ د راپور له مخې د پرون شپې په بمباریو کې د ښځو او ماشومانو په گډون ۴۰۰ کسانو خپل ژوند له لاسه ورکړی او سلگونه نور لا د نړیدلو ودانیو لاندې دي. pic.twitter.com/iCgoZy3PAj
উপরে উল্লেখিত তৃতীয় দাবি অর্থাৎ ভাইরাল ভিডিওটিতে কোনও একটি শহরে লাগাতার বিমানহামলা হতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ করলে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা নিউজ এজেন্সির অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী, সেটি অক্টোবর ইজরায়েলের উত্তর তেল আবিবের হেরজলিয়া এলাকায় ইরান তরফে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য। অন্যদিকে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণের সময় আমরা সেটির উপরে ডিডি ইন্ডিয়ার লোগোও দেখতে পাই। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালালে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর ডিডি ইন্ডিয়ার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও একই তথ্য-সহ এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। সেই ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, “নেগেভ মরুভূমিতে নেভাটিম বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ।”
এর থেকে স্পষ্ট হয় যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া যুদ্ধের দৃশ্য দাবি করে ছড়ানো হচ্ছে গাজা এবং ইজরায়েলের পুরনো ছবি ও ভিডিও।
ছবিগুলিতে ভারতীয় বিমানঘাটিতে পাকিস্তান সেনার পাল্টা হামলার দৃশ্য অথবা পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় সেনা বাহিনীর হামলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
প্রথম এবং দ্বিতীয় ছবি দুটি যথাক্রমে ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল ও ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর গাজায় ইজরায়েলি বিমান হামলার ঘটনা। অন্যদিকে ভাইরাল ভিডিওটিতে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের শুরুতে ইজরায়েলের মাটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য দেখা গেছে।