ফ্যাক্ট চেক: পুরনো ও ভুয়ো ছবি ছড়িয়ে ভারতের আত্মসমর্পণের মিথ্যে দাবি বাংলাদেশী ইউজারদের

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিগুলির পুরোপুরি মিথ্যে, সেই সঙ্গে ছবিগুলির সঙ্গেও ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কোনও সম্পর্ক নেই। 

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: পুরনো ও ভুয়ো ছবি ছড়িয়ে ভারতের আত্মসমর্পণের মিথ্যে দাবি বাংলাদেশী ইউজারদের

পেহেলগাঁও-তে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে গত ৭ মে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। তারপর থেকে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় বিরতি পড়েছে আমেরিকার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরত্তিতে দুই দেশ সম্মত হওয়ায়। এই ঘটনার পর বাংলাদেশের একাংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারী তিন-বা চারটি ছবির কোলাজ শেয়ার করে দাবি করছেন যে পাক হামলায় ভারত বিপর্যস্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। 

উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যবহারকারী চারটি ছবির একটি কোলাজ পোস্ট করেছেন। প্রথম ছবিতে পাকিস্তান বায়ুসেনার পালইটদের একটি কাগজে সই করতে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ছবিতে ভারতীয় বায়ুসেনার এক মহিলা পাইলটকে বিধ্বস্ত অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তৃতীয় এবং চতুর্থ ছবিতে দুটি ভিন্ন স্থানে সেনার পোশাকে থাকা প্রচুর মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। 

ছবিগুলি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ভারত,,পাকিস্তানের সাথে আর যু'দ্ধের কথা মুখে আনবে না দুই রাতে ভারতের যে অবস্থা করে দিয়েছে পাকিস্তান। নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ ভারতের,ট্রাম্পের পা ধরে মধ্যস্থতার জন্য কান্না। ভারতের ক্ষতির পরিমান মোট ১৩ টি যুদ্ধ বিমান হারিয়েছে, ভারতীয় সেনা ও বায়ু সেনা সহকারে আটক ১০০+, ভারতীয় সেনা মৃত্যুর সংখ্যা সেঞ্চুরি প্লাস, ড্রোন হারিয়েছে ২০০+, কাশ্মীরের ৮০ কিলোমিটার দখল পাকিস্তানের, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান, উপর দিয়ে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকিং সেক্টর দসে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ লস। দাদারা এবার বুঝলেন ঈমানদার মৃ'ত্যুকে ভয় করে না আলহামদুলিল্লাহ  পাকিস্তান জিন্দাবাদ,,.যু'দ্ধ কোন দেশের জন্য কাম্য নয় সে হোক ইন্ডিয়া কিংবা পাকিস্তান উভয় ক্ষতি।"

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিগুলির পুরোপুরি মিথ্যে, সেই সঙ্গে ছবিগুলির সঙ্গেও ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কোনও সম্পর্ক নেই। 

ভারত কি আদৌ আত্মসমর্পণ করেছে?

না, ভারত বা পাকিস্তান কোনও পক্ষই আত্মসমর্পণ করেনি। বরং একটি যৌথ আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধে বিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে। ভারতীয় বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রী ১০ মে বিকেলে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জানান যে দুপুর নাগাদ ভারতীয় তিন সেনার প্রধানের কাছে পাকিস্তানের তিন সেনাবাহিনীর প্রধানের একটি ফোন এসেছিল। তারপরই উভয়পক্ষ স্থল, জল ও আকাশসীমায় হামলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশহাক দারও একটি এক্স পোস্টের মাধ্যমে একই তথ্য জানান।

Advertisement

তবে বিক্রম মিশ্রীর এই ঘোষণার আগেই অবশ্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্স পোস্ট করে জানান যে তিনি উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দুই দেশই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এ বাদে ভাইরাল পোস্টটিতে যে ধরনের ক্ষয়ক্ষতির দাবি করা হয়েছে, তা প্রায় পুরোটাই ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক এবং অতিরঞ্জিত। সরকারি ও বেসরকারি, উভয় তথ্য অনুযায়ী কিছু ক্ষয়ক্ষতি উভয় পক্ষে হলেও যেমনটা বলা হয়েছে তেমন কোনওভাবেই নয়।  

প্রথম ছবি যেখানে জনাদুয়েক পাক বায়ুসেনার পাইলটকে স্বাক্ষর করতে দেখা যাচ্ছে, সেই ছবির কোনও পুরোনো সংস্করণ রিভার্স সার্চের মাধ্যমে পাওয়া যায়নি। ফলে ছবিটি সাম্প্রতিক বলেই অনুমান করা যায়। একাধিক পাকিস্তানি হ্যান্ডেল ও ওয়েবসাইটেও ছবিটি ১০ মে প্রকাশ করা হয়। যদিও ছবিটি কোথাকার এবং কবেকার, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।

দ্বিতীয় ছবি, যেখানে এক ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটকে মাথায় হাত রেখে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে, সেই ছবিটি রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের একটি খবরে পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের ১ জুন প্রকাশিত এই জানানো হয় যে, ট্রেনিং চলার সময় বায়ুসেনার জেট বিধ্বস্ত হয় এবং গ্রামবাসীরা ছুটে গেলে দুজন পাইলটকে ব্যথায় কাতরাতে দেখেন। সেই সময়ই ওই ছবিটি তোলা হয়।

তৃতীয় ছবি সেনার পোশাকে থাকা অনেকগুলি মৃতদেহ সারিবদ্ধ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটি রিভার্স সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত ২০১০ সালের এপ্রিল মাসের একটি খবর পাওয়া যায়। যা পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে আপডেট করা হয়েছিল। 

খবর অনুযায়ী, এই ছবিটি ২০১০ সালে ছত্তিসগড়ের দান্তেওয়াড়ায় হওয়া মাওবাদী হামলার। এই ঘটনায় সিআরপিএফের ৭৪ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। 

চতুর্থ ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে কোনও উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে যা থেকে অনুমান করা যায় ছবিটি এআই বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে। 

ছবিতে সব থেকে বড় যে অসঙ্গতি রয়েছে তা হলো, এক জওয়ানের হাতে লম্বা নলওয়ালা রাইফেল রয়েছে, কিন্তু সেই রাইফেলে গুলি মজুদ করার কোনও ম্যাগাজিনই নেই। যা কার্যত ছবিতে বর্ণিত পরিস্থিতিতে অসম্ভব। সেই সঙ্গে বন্দুকটি এক সরলরেখায় নেই। যেন অল্প বাঁকা। 

এই সংশয়গুলি নিরসন করতে ছবিটিকে হাইভ মডারেশনের মতো এআই পরীক্ষার টুলে আপলোড করলে দেখা যায়, ছবিটি ৯৯ শতাংশের বেশি এআই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। 

এর থেকেই পরিষ্কার, পুরনো, অপ্রাসঙ্গিক এবং এআই নির্মিত ছবি শেয়ার করে কীভাবে বিভ্রান্তিকর দাবি ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ফ্যাক্ট চেক

facebook users

দাবি

ছবির মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান কীভাবে ভারতের বিপুল ক্ষতি করেছে।

ফলাফল

প্রথম ছবিটি পাকিস্তানের। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ছবিটি ২০১০ ও ২০২৩ সালের। শেষেরটি এআই নির্মিত।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement