Delhi Election Result 2025: দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়। আম আদমি পার্টি (AAP)-র ভরাডুবি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সকাল ৯টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত বিজেপি ৩২টি আসনে এগিয়ে ছিল। আপ মাত্র ১৪টি আসনে এগিয়ে ছিল। এর অল্প সময়ের মধ্যেই দেখা যায়, বিজেপি প্রায় ৫০টি আসনে এগিয়ে যায়। আপ ১৯টি আসনে এগিয়ে ছিল। ফলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে আপ বড় পরাজয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে।
কিন্তু এরই মধ্যে অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন জাগছে। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লিবাসীর সহানুভূতি পেলেন না কেন? ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন তো পেয়েছিলেন! দু'জনই মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় কারাগারে যান এবং পরে মুক্তি পান। বরং কেজরিওয়ালের সরকারে তো তাঁর দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও জেলে গিয়েছেন। তবুও, কেজরিওয়াল জনসমর্থন পেলেন না কেন? বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিপর্যয়ের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর বিরোধীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছিলেন। তার মধ্যে অনেক অভিযোগ এমনও আছে, যা প্রমাণিত হয়নি। এমনকি তাঁকে এই জন্য অনেকবার ক্ষমাও চাইতে হয়েছে। এই কারণে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কেজরিওয়াল এরপর অভিযোগ করেন যে হরিয়ানা সরকার দিল্লিতে বিষাক্ত জল সরবরাহ করছে এবং গণহত্যা ঘটাতে চাইছে। এই অভিযোগের পর বিতর্ক আরও বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সাইনি দিল্লি সীমান্তে গিয়ে সরাসরি জল পান করে দেখান এবং কেজরিওয়ালের দাবি খণ্ডন করেন।
রাজনীতিতে আসার সময় কেজরিওয়াল ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন না। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তিনি সরকারি নিরাপত্তা এবং বিলাসবহুল গাড়ি গ্রহণ করেন। তাঁর জন্য নির্মিত অত্যন্ত ব্যয়বহুল বাসভবন, যা ‘শীশমহল’ নামে পরিচিতি পায়, তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। এমনকি সিএজি রিপোর্টেও এই খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, যা জনমানসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ‘বাঁটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ স্লোগান দিয়েছিলেন, যা বিভিন্ন জায়গায় ভোট মেরুকরণের কাজ করে। কিন্তু দিল্লিতে আপ এবং কংগ্রেস একজোট হয়নি। হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সামান্য ব্যবধানে হেরে গিয়েছিল, যা থেকে শিক্ষা নিয়ে দিল্লিতে জোট গড়া উচিত ছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন সরকার মহিলাদের জন্য মাসিক ভাতা চালু করেছিল। আর তাতে হাতেনাতে সুফলও মিলেছিল। দিল্লিতে আপও এই ধরনের স্কিম ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এতে জনগণের মধ্যে এটাই মনে হয়েছিল যে, পরের মেয়াদে ক্ষমতায় এলেও কেজরিওয়াল হয় তো এটি চালু করতে পারবেন না।
দিল্লিতে সুপেয় জলের সংকট এবং শহরের অপরিচ্ছন্নতা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। গ্রীষ্মকালে জলসংকট তীব্র হয়, ট্যাঙ্কার মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় আপ সরকার।
আইনি কারণে কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন। আপের পক্ষ থেকে অতীশিকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলেও জনগণ বুঝতে পারছিল যে কেজরিওয়াল ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন না।। আপ-এর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কেজরিওয়ালকেই ভেবে রেখেছিলেন দিল্লিবাসী। আর তার হয়তো দিল্লির সাধারণ মানুষ বিকল্প খুঁজতে শুরু করে। আর সেই সুযোগই নেয় বিজেপি।
এই সব কারণেই দিল্লিতে আম আদমি পার্টি বড় পরাজয়ের সম্মুখীন হচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।