হেনস্থা দেবশ্রী রায়কেরাস্তার অবলা প্রাণীদের নিয়ে তো বটেই বাড়ির পোষ্য নিয়েও এখন সমস্যা দেখা দিয়ে এই শহরের একাংশের। আর যার জেরে হেনস্থার শিকার হতে হল অভিনেত্রী তথা পশুপ্রেমী দেবশ্রী রায়কে। তিনি যে বহু বছর ধরে অবলা প্রাণীদের নিয়ে কাজ করছেন, সেটা নাকি জানেন না কেউ, অভিনেত্রীর অভিযোগ। গোটা ঘটনাটি নিয়ে ভীষণভাবে বিরক্ত অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। bangla.aajtak.in-এর কাছে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি।
দেবশ্রী রায়ের পরিচিতি সর্বজনবিদিত। বাংলা সিনেমায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁকে শুনতে হল তিনি কে? পোষ্য কুকুর নিয়ে আবাসনের সমস্যা মেটাতে গিয়ে সেখানকারই এক বাসিন্দার কাছে তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয়। দেবশ্রী রায় বলেন, 'হয়ত এই কারণেই বলেছে যাতে আমি অপমানিত বোধ করে সেখান থেকে চলে যাই। ওই মহিলা ভেবেছিলেন আমায় এত অপমান করবেন যাতে আমি চলে যাই। আমি যে টিকে দাঁড়িয়ে আছি ওখানে তা বুঝতে পারেনি। আমি যে বিহিত করে যাব, সেটা বুঝতে পারেনি। উনি কি জানেন না, আমি গোটা বাংলায় কাজ করি অবলা প্রাণীদের জন্য। তাহলে বলছে কেন আপনি শুধুমাত্র অভিনেত্রী। আবার আমায় ওই মহিলা বলছেন আমার নাকি আরও ভাল কাজ করা উচিত। আমি কেন এখানে সময় নষ্ট করছি।'
দেবশ্রী রায় ঘটনা নিয়ে বলেন, 'আমার ফাউন্ডেশনে সদ্য যোগ দিয়েছে অদ্রিজা। সে থাকে দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত আবাসনে। আর সেখানেই তাঁর পোষ্য কুকুরকে নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।' ঠিক কী সমস্যা? অভিনেত্রী বলেন, 'অদ্রিজার বাবা পেশায় একজন চিকিৎসক, ওঁনার সম্প্রতি বাইপাস সার্জারি হয়েছে। তাঁর মেয়ে অদ্রিজা তাঁদের পোষ্যকে নিয়ে নিয়মিত আবাসনের ভেতরে হাঁটতে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের পোষ্য মল-মূত্র ত্যাগ করে, যেটা অদ্রিজা পরিষ্কারও করে দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আবাসনের কিছু বাসিন্দার তাতে ঘোর আপত্তি।' দেবশ্রী রায় বলেন যে ওই আবাসনের বাসিন্দাদের কথানুয়ায়ী তাঁরা অদ্রিজাকে তাঁর পোষ্য নিয়ে যেখানে যেখানে যেতে বারণ করা হয়েছে, সেখানে সেখানেই অদ্রিজা যাচ্ছে তাঁর পোষ্যকে নিয়ে।
দেবশ্রী রায় বলেন, 'এটা যে বা যাঁরা করছে সেটা তো অমানবিক আচরণ। এটা তো ঠিক নয়। আমায় অদ্রিজার মা ফোন করলে আমি সেখানে যাই সমাধান করতে। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে এক মহিলা দৌড়ে এসে আমায় বলছে আপনি এখানে কী করছেন, আপনাকে তো এখানে ডাকা হয়নি। আপনি শুধুমাত্র একজন অভিনেত্রী। তখন আমি বলি আমি দুঃখিত, আমি শুধুমাত্র একজন অভিনেত্রী নই, আমি গত ১৮-১৯ বছর ধরে অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ারে কাজ করছি। এটা আমার মৌলিক কর্তব্য যে এখানে এসে দেখা যে কী হচ্ছে। আবাসনের ওই মহিলা আমায় জানান যে আমাদের প্রায় সকলেরই পোষ্য রয়েছে কিন্তু একমাত্র অদ্রিজার পরিবার সমস্যার সৃষ্টি করছে।' অভিনেত্রী জানান যে আবাসনের একাংশের অভিযোগ অদ্রিজা তাঁর পোষ্যকে নিয়ে পুজো প্যান্ডেলে ঢুকে পড়ছে, আবাসনের ভেতর থাকা শিবমন্দিরের সামনে দিয়ে ঘোরাচ্ছে। এটা নিয়েই বচসার সৃষ্টি। এরপরই ওই মহিলার আবাসনের কমিটির অন্যান্যদের বলেন যে দেবশ্রী রায় কে? কেন তাঁকে কৈফিয়েত দিতে হবে? রীতিমতো হেনস্থা হতে হয় অভিনেত্রীকে।
দেবশ্রী রায় জানিয়েছেন পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এই নিয়ে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পর অদ্রিজার বাবা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দেবশ্রীর দাবি, সেই আবাসনের বাসিন্দারা তাঁকে বারবার বলেছেন, অদৃজা বলে মেয়েটি নাকি তাঁর কুকুরটিকে মন্দিরের সামনে ঘোরান। যেখানে তাঁরা কালীপুজো করেন। যা নিয়ে পালটা দেবশ্রী প্রশ্ন তুললেন, 'আমি মানি কুকুর তো মহাকালের দূত। আমাদের যত দেবদেবী সবার বাহন পশু। সেখানে মহাকালের দূতকে শিবমন্দিরের সামনে নিলে পাপ হয়? শিবের তো প্রিয় জিনিস কুকুর।' 'এঁরা কি প্রকৃত মানুষ', প্রশ্ন দেবশ্রীর। প্রসঙ্গত, আবাসনের পোষ্যদের নিয়ে সমস্যা বহু পুরনো। শ্রীলেখা মিত্রকেও এই একই ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল। এই নিয়ে দেবশ্রী রায় বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি যাতে পোষ্যদের জন্য কিছু করা যায়। কোনও আইন যদি নিয়ে আসা যায়। ফ্ল্যাটের কোনও নথিতে লেখা থাকে না পোষ্য নিয়ে থাকা যাবে না বা পোষ্যকে নিয়ে বাইরে ঘোরানো যাবে না। আমরা দেখছি কীভাবে বাড়ির পোষ্যদের আরও সুরক্ষিত করা যায়, এই অন্যায় আবদার মেনে নেওয়া যাবে না।'