গত বছর ৫ অগাস্ট গদিচ্যুত হতে হয়েছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। যার নেপথ্যে ছিল কোটা বিরোধী আন্দোলন। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশজুড়ে। দেখতে দেখতে সেই আন্দোলনের একবছর হয়ে গেল। সেই জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করতে ৩৬ দিনের কর্মসূচি নিয়েছে মহম্মদ ইউনূসের সরকার। যার সূচনা হয়েছে পয়লা জুলাই থেকে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালা।’ আর এই উদযাপনের মাঝেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নেমেছেন।
জানা যাচ্ছে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে ৮ ঘণ্টা ধরে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। বুধবার সকাল ১০টা থেকে পটিয়া বাইপাস এলাকায় অবরোধ শুরু হয়। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও সেখানেই অবস্থান করে থাকেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্যদের নামাতে হয়।
প্রসঙ্গত , মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১১টায় পটিয়া থানা-পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৯ জন আহত হন বলে দাবি করেছে উভয় পক্ষ। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দাবি, পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা চালায়। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, নেতা-কর্মীরা ‘মব’ সৃষ্টি করছিল। এর প্রতিবাদে বুধবার পটিয়া থানা ঘেরাওয়ের ডাক দেয় সংগঠনটি। সকাল ৯টার থেকেই থানা ঘেরাও শুরু করেন তাঁরা। পরে খণ্ড খণ্ড মিছিলে এসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে। সেখানে স্লোগান দিয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূরের অপসারণ দাবি করেছেন তাঁরা।
আন্দোলনকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। অবরোধের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। তবে পরীক্ষার্থী ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারী ও যাত্রীদের। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ বলেছেন, ওসি জায়েদ নূরের অপসারণ না হলে তাঁরা সড়ক ছাড়বেন না। শুরুতে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলেও পরে তিনি অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত সরবেন না বলে জানান হয়।
জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার রাতে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলিগের সহ-সভাপতি দীপঙ্কর দে-কে ধরে থানায় নিয়ে আসে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তবে ওই ছাত্রলিগ নেতার নামে কোনও মামলা না থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে আপত্তি জানান ওসি। এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী ও এনসিপির মহানগর সংগঠক সাইদুর রহমানসহ কয়েকজন আহত হন। এই ঘট নাকে ঘিরেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এদিকে আন্দোলনের জেরে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আন্দোলনের কারণে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।