Europe Heatwave Death Toll: শেষের শুরু? গরমে পুড়ে ইউরোপে হাজার হাজার মৃত্যু চলতি বছরে

ভাল নেই বসুন্ধরা। গোটা বিশ্বে যখন যুদ্ধ যুদ্ধ রব। মিসাইল, পরমাণু হামলার হুমকি। তখন আস্ত মানবজাতির বিনাশের স্ক্রিপ্ট লিখছে প্রকৃতি? ইউরোপে যা ঘটছে, তাতে এটুকু ইঙ্গিত মিলছে, পরমাণু বোমা বা যুদ্ধের বোধ হয় প্রয়োজন হবে না। গোটা মানবসভ্যতাই হয়তো শেষ হয়ে যেতে পারে। 
 

যে ইউরোপ গ্রীষ্মকালেও বসন্তের মতো আরামদায়ক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত ছিল, সেই ইউরোপেই প্রবল তাপপ্রবাহে হাজার হাজার মৃত্যু। বিজ্ঞানীদের হিসেব বলছে, ইউরোপজুড়ে তাপপ্রবাহে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর সংখ্যা ইউরোপের ১২টি শহরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর সংখ্যা। 

গত ২ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনের একটি স্টাডি করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, পশ্চিম ইউরোপের একটি বড় অংশ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে চরম তাপপ্রবাহে। স্পেনে ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে তাপমাত্রার পারদ। ফ্রান্সে একের পর এক জঙ্গলে দাবানলে প্রচুর পশুপাখির মৃত্যু হয়েছে। 

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, প্রায় ২ হাজার ৩০০ মৃত্যুর মধ্যে দেড় হাজার মৃত্যু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে। ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন ও লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের যৌথ স্টাডিতে জানা যাচ্ছে, ইউরোপে এরকম তাপপ্রবাহ অতীতে কখনও হয়নি।
 

যে ১২টি শহরে সমীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে বার্সেলোনা, লন্ডন, মিলানও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই শহরগুলিতে তাপপ্রবাহের জেরে একলাফে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে তাপমাত্রা। 

গবেষকরা পুরনো মৃত্যুর হিসেব এবং নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানভিত্তিক মডেল ব্যবহার করে একটি আনুমানিক হিসাব তৈরি করেছেন। কারণ বেশিরভাগ তাপজনিত মৃত্যু সরকারি রিপোর্টে ধরা পড়ে না বা অনেক সরকার এই ডেটা প্রকাশও করে না।
 

গবেষকরা বলছেন, তাপপ্রবাহ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রাণ নিচ্ছে — যেমন কারও আগে থেকেই যদি শ্বাসপ্রশ্বাস বা হার্টের সমস্যা থাকে, তাহলে অতিরিক্ত গরমে সেই সমস্যা গুরুতর হয়ে ওঠে।
 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু গবেষণা সংস্থা কোপার্নিকাস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জুন ছিল ইতিহাসের তৃতীয় উষ্ণতম জুন। এর চেয়ে গরম ছিল শুধু ২০২৪ এবং ২০২৩ সালের জুন মাস। বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে এই বছর রেকর্ড গরম পড়েছে। অনেক জায়গায় গরমের অনুভূত তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়েছে, যা ‘মারাত্মক হিট স্ট্রেস’ হিসেবে ধরা হয়।
 

কোপার্নিকাস সংস্থার জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সামান্থা বার্জেস জানিয়েছেন, 'পৃথিবী যত গরম হবে, তত ঘনঘন এবং তীব্র তাপপ্রবাহ হবে, যা আরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করবে।' ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ইউরোপে ২০২২ সালের তাপপ্রবাহে প্রায় ৬১,০০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। এই সংখ্যা বোঝাচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সরকার এখনও তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুত নয়।
 

এই চরম গরমের অন্যতম কারণ হল গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। যখন আমরা কয়লা, তেল বা গ্যাস পোড়াই, তখন সেই সব গ্যাস বাতাসে মিশে জলবায়ুকে গরম করে। এইভাবে বছরের গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে, যখন তাপপ্রবাহ হয়, তখন সেই গরম আরও বেশি মাত্রায় পৌঁছয়। গরমের ধরন ও মাত্রা, দুটোই আগের তুলনায় অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।